তৃতীয় অধ্যায় পাঠ-৮ বুলিয়ান অ্যালজেবরা, বুলিয়ান চলক, ধ্রুবক, পূরক ও বুলিয়ান স্বতঃসিদ্ধ।

তৃতীয় অধ্যায় পাঠ-৮ বুলিয়ান অ্যালজেবরা, বুলিয়ান চলক, ধ্রুবক, পূরক ও বুলিয়ান স্বতঃসিদ্ধ।

এই পাঠ শেষে যা যা শিখতে পারবে-

  • ১। বুলিয়ান অ্যালজেবরা ও এর বৈশিষ্ট্য ব্যাখ্যা করতে পারবে।
  • ২। বুলিয়ান চলক, ধ্রুবক ও পূরক ব্যাখ্যা করতে পারবে।
  • ৩। বুলিয়ান স্বতঃসিদ্ধ ও বুলিয়ান দ্বৈতনীতি ব্যখ্যা করতে পারবে।
  • ৪। সত্যক সারণি তৈরি করতে পারবে।
  • ৫। সত্যক সারণির  আউটপুট থেকে সমীকরণ তৈরি করতে পারবে।

বুলিয়ান অ্যালজেবরাঃ বুলিয়ান অ্যালজেবরার উদ্ভাবক হলেন প্রখ্যাত ইংরেজ গণিতবিদ জর্জ বুলি। জর্জ বুল সর্বপ্রথম গণিত ও যুক্তির মধ্যে সম্পর্ক আবিষ্কার করেন এবং গণিত ও যুক্তির ওপর ভিত্তি করে এক ধরণের অ্যালজেবরা তৈরি করেন, যাকে বুলিয়ান অ্যালজেবরা বলা হয়।
বুলিয়ান অ্যালজেবরা মূলত লজিকের সত্য অথবা মিথ্যা- এ দুটি স্তরের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। বুলিয়ান অ্যালজেবরার সত্য ও মিথ্যাকে বাইনারির  “১“ এবং “০” দ্বারা পরিবর্তন করে নিতেই কম্পিউটারের সমস্ত গাণিতিক সমস্যা বুলিয়ান অ্যালজেবরার সাহায্যে করা সম্ভব হয়। বুলিয়ান চলকের দুটি মান থাকায় বুলিয়ান অ্যালজেবরা দশমিক অ্যালজেবরার তুলনায় অনেক সহজ পদ্ধতি।
কোনো সার্কিটে বিদ্যুতের উপস্থিতিকে ১ ধরা হয় এবং বিদ্যুতের অনুপস্থিতিকে ০ ধরা হয়। ডিজিটাল সিস্টেমে ভোল্টেজ লেভেল ০ থেকে .৮ ভোল্টকে লজিক ০ ধরা হয় এবং ভোল্টেজ লেভেল  ২ থেকে  ৫  ভোল্টকে লজিক  ১  ধরা হয়। ডিজিটাল সিস্টেমে +০.৮  ভোল্ট থেকে  +২  ভোল্ট লেভেল সংজ্ঞায়িত নয় বিধায় ব্যবহার করা হয় না।
বুলিয়ান অ্যালজেবরার বৈশিষ্ট্যঃ 
  • ১। বুলিয়ান অ্যালজেবরায় মাত্র দুটি অঙ্ক ‘০’ এবং ‘১’ ব্যবহৃত হয়।
  • ২। বুলিয়ান চলকের দুটি মান থাকায় বুলিয়ান অ্যালজেবরা দশমিক অ্যালজেবরার তুলনায় অনেক সহজ পদ্ধতি।
  • ৩। বুলিয়ান অ্যালজেবরায় কোনো  ধরনের ভগ্নাংশ, লগারিদম, বর্গ, ঋণাত্মক সংখ্যা, কাল্পনিক সংখ্যা ইত্যাদি ব্যবহার করা যায় না।
  • ৪। বুলিয়ান অ্যালজেবরায় শুধু মাত্র যৌক্তিক যোগ, গুণ ও পূরকের মাধ্যমে সমস্ত গাণিতিক কাজ করা হয়।
  • ৫। বুলিয়ান অ্যালজেবরায় কোনো ধরনের জ্যামিতিক বা ত্রিকোণমিতিক সূত্র ব্যবহার করা যায় না।

বুলিয়ান চলকঃ বুলিয়ান অ্যালজেবরায় যার মান সময়ের সাথে পরিবর্তিত হয় তাকে বুলিয়ান চলক বলে। যেমন- C = A + B, এখানে A ও B হচ্ছে বুলিয়ান চলক।
বুলিয়ান ধ্রুবকঃ বুলিয়ান অ্যালজেবরায় যার মান সময়ের সাথে অপরিবর্তিত থাকে তাকে বুলিয়ান  ধ্রুবক বলে। যেমন- A = 0 + 1,  এখানে 0 এবং 1 হচ্ছে বুলিয়ান  ধ্রুবক।
ধ্রুবকের মান সব সময় অপরিবর্তিত থাকে কিন্তু চলকের মান সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তিত হয়। বিভিন্ন ইলেকট্রনিক বর্তনীর ইনপুট ও আউটপুটের লজিক অবস্থা নির্দিষ্ট করার জন্য বুলিয়ান চলক ও ধ্রুবক ব্যবহার করা হয়।
বুলিয়ান পূরক: বুলিয়ান অ্যালজেবরায় যেকোনো  চলকের মান  ০ অথবা  ১ হয়। এই  ০ এবং  ১  কে একটি অপরটির বুলিয়ান পূরক বলা হয়। বুলিয়ান পূরকে ‘–’ বা ‘  ‘  ’ চিহ্নের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। গণিতের ভাষায় লেখা হয় A এর পূরক A′।

বুলিয়ান অ্যালজেবরা তিন ধরনের মৌলিক যুক্তিমূলক ক্রিয়া সম্পাদন করে। ক্রিয়াগুলো হলো− 
  • ১।  অর অপারেশন (OR Operation) বা যৌক্তিক যোগ (Logical Addition)
  • ২। অ্যান্ড অপারেশন (AND Operation) বা যৌক্তিক গুণ (Logical Multiplication)
  • ৩। নট অপারেশন (NOT Operation) বা যৌক্তিক উল্টানো (Logical Inversion)

বুলিয়ান স্বতঃসিদ্ধঃ
বুলিয়ান অ্যালজেবরায় সমস্ত গাণিতিক কাজ শুধুমাত্র যৌক্তিক যোগ, গুণ ও পূরকের সাহায্যে করা হয়। বুলিয়ান অ্যালজেবরায় যৌক্তিক যোগ,গুণ ও পূরকের নিয়মগুলোকে বুলিয়ান স্বতঃসিদ্ধ বলে। বুলিয়ান স্বতঃসিদ্ধ গুলো-
  • ১। যোগের বুলিয়ান স্বতঃসিদ্ধ (Boolean Postulates of OR)
  • ২। গুণের বুলিয়ান স্বতঃসিদ্ধ (Boolean Postulates of AND)
  • ৩। পূরকের বুলিয়ান স্বতঃসিদ্ধ (Boolean Postulates of NOT)
যোগের বুলিয়ান স্বতঃসিদ্ধঃ যৌক্তিক যোগের সময় বুলিয়ান অ্যালজেবরা যেসব নিয়ম মেনে চলে তাকে যোগের বুলিয়ান স্বতঃসিদ্ধ বলে। যোগের সময় বুলিয়ান চলকগুলোর মানের মধ্যে যে যোগ চিহ্ন (+) ব্যবহার করা হয় তা প্রচলিত যোগের চিহ্ন নয়। বুলিয়ান অ্যালজেবরায় এ যোগ চিহ্নকে যৌক্তিক যোগ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। যৌক্তিক যোগের চারটি নিয়ম প্রচলিত। যথা−
  • (1)    0 + 0 = 0
  • (2)    0 + 1 = 1
  • (3)    1 + 0 = 1
  • (4)    1 + 1 = 1
উপরের বুলিয়ান স্বতঃসিদ্ধ থেকে বলা যায় যে, বুলিয়ান অ্যালজেবরায় যৌক্তিক যোগের ক্ষেত্রে যেকোনো একটির মান ১ হলে যৌক্তিক যোগফল ১ হবে, অন্যথায় ০ হবে।
গুণের বুলিয়ান স্বতঃসিদ্ধ: যৌক্তিক গুণের সময় বুলিয়ান অ্যালজেবরা যেসব নিয়ম মেনে চলে তাকে গুণের বুলিয়ান স্বতঃসিদ্ধ বলে। যৌক্তিক গুণের সময় বুলিয়ান চলকগুলোর মানের মধ্যে গুণ চিহ্ন (.) ব্যবহার করা হয়। যৌক্তিক গুণের চারটি নিয়ম প্রচলিত। যথা:
  • (1)   0 . 0  = 0
  • (2)   0 . 1   = 0
  • (3)   1 . 0   = 0
  • (4)   1 . 1   = 1
উপরের বুলিয়ান স্বতঃসিদ্ধ থেকে বলা যায় যে, বুলিয়ান অ্যালজেবরায় যৌক্তিক গুণের ক্ষেত্রে যেকোনো একটির মান  ০  হলে যৌক্তিক গুণফল  ০  হবে, অন্যথায়  ১  হবে।
পূরকের বুলিয়ান স্বতঃসিদ্ধ: যৌক্তিক পূরকের সময় বুলিয়ান অ্যালজেবরা যেসব নিয়ম মেনে চলে তাকে পূরকের বুলিয়ান স্বতঃসিদ্ধ বলে। যৌক্তিক পূরকের সময় বুলিয়ান চলকগুলোর উপর পূরক চিহ্ন ( ¯ ) ব্যবহার করা হয়। বুলিয়ান অ্যালজেবরায় যৌক্তিক পূরকের ক্ষেত্রে ০ থাকলে ১ হয়, এবং ১ থাকলে ০ হয়।

বুলিয়ান দ্বৈতনীতি: বুলিয়ান অ্যালজেবরায় ব্যবহৃত সকল উপপাদ্য বা সমীকরণ যে দুটি নিয়ম মেনে একটি বৈধ্য সমীকরণ থেকে আর একটি বৈধ্য সমীকরণ নির্ণয় করা যায় তাকে বুলিয়ান দ্বৈতনীতি বলে। অর্থাৎ বুলিয়ান অ্যালজেবরায় অর  (OR)  এবং অ্যান্ড  (AND) এর সাথে সম্পর্কযুক্ত সকল উপপাদ্য বা সমীকরণ দ্বৈতনীতি মেনে চলে। এ নিয়ম দু টি হলো −
  • ১।  ০ এবং ১ পরস্পর বিনিময় করে অর্থাৎ ০ এর পরিবর্তে ১ এবং ১ এর পরিবর্তে ০ ব্যবহার করে।
  • ২। অর (+) এবং অ্যান্ড (.) পরস্পর বিনিময় করে অর্থাৎ অর (+) এর পরিবর্তে অ্যান্ড (.) এবং অ্যান্ড (.) এর পরিবর্তে অর (+) ব্যবহার করে।
উদাহরণ: ১ + ১ = ১ সমীকরণে ১ এর পরিবর্তে ০ এবং (+) এর পরিবর্তে (.) বসিয়ে পাই ০.০ = ০ এটাও একটি বৈধ্য সমীকরণ। আবার ০.১ = ০  সমীকরণে  ০  এর পরিবর্তে  ১  ও  ১ এর পরিবর্তে  ০ এবং (.) এর পরিবর্তে (+) বসিয়ে পাই ১ + ০ =১ এটাও একটি বৈধ্য সমীকরণ।

সত্যক সারণি: লজিক সার্কিটে এক বা একাধিক ইনপুটের উপর লজিক সার্কিটের আউটপুট নির্ভর করে। সুতরাং যে সারণির মাধ্যমে লজিক সার্কিটের বিভিন্ন ইনপুটের সাপেক্ষে আউটপুট প্রদর্শন করা হয়, তাকে সত্যক সারণি বলে। প্রতিটি লজিক গেইটের সত্যক সারণি ভিন্ন ভিন্ন হয়। যদি সত্যক সারণিতে n সংখ্যক ইনপুট চলক থাকে তবে ইনপুট সেট হবে 2n  সংখ্যক।
উদাহরনঃ একটি অর(OR) লজিক গেইটের ইনপুট চলক A ও B এর সাপেক্ষে আউটপুট ফাংশন F= A+B এর সত্যক সারণি দেখানো হল। যেহেতু চলক দুইটি(A ও B) তাই ইনপুট সেট ২=৪ টি হবে।
সত্যক সারণি থেকে আউটপুটের বুলিয়ান এক্সপ্রেশন বা সমীকরণ লেখার উপায়ঃ 
সত্যক সারণি থেকে আউটপুটের বুলিয়ান এক্সপ্রেশন বা সমীকরণ লেখার জন্য নিম্নলিখিত ধাপসমূহ অনুসরণ করতে হয়-
  • ১। সত্যক সারণির যে সকল ক্ষেত্রে আউটপুটের মান ১, সেসকল ক্ষেত্রে প্রোডাক্ট টার্ম নির্নয় করতে হবে।
  • ২। প্রাপ্ত প্রোডাক্ট টার্মগুলোর যৌক্তিক যোগ করলে আউটপুট ফাংশন বা সমীকরণ বা এক্সপ্রেশন পাওয়া যাবে।
  • ৩। প্রাপ্ত আউটপুট ফাংশনকে সরলীকরণ করলে সার্কিট বাস্তবায়ন সহজ হবে। (অপশনাল)
উপরের সত্যক সারণির আউটপুটে তিনটি ক্ষেত্রে ১ আছে। এক্ষেত্রে প্রোডাক্ট টার্মগুলো হল-
প্রাপ্ত প্রোডাক্ট টার্মগুলোর যৌক্তিক যোগ করলে আউটপুট ফাংশন —

পাঠ মূল্যায়ন- 

  • ক। বুলিয়ান অ্যালজেবরা কী?
  • ক। বুলিয়ান চলক কী?
  • ক। বুলিয়ান ধ্রুবক কী?
  • ক। বুলিয়ান পূরক কী?
  • ক। বুলিয়ান স্বতঃসিদ্ধ কী?
  • ক। বুলিয়ান দ্বৈতনীতি কী?
  • ক। সত্যক সারণি কী?

  • খ। ‘১+১+১=১’ ব্যাখ্যা কর।
  • খ। T + T = T ব্যাখ্যা কর।
  • খ।  A+1+1=1 ব্যাখ্যা কর।
  • খ। সত্যক সারণি কেন ব্যবহার করা হয় লেখ।
  • খ। বাইনারি ১+১ ও বুলিয়ান ১+১ এক নয়-বুঝিয়ে লেখ।
  • খ। ‘বাইনারি যোগ এবং বুলিয়ান যোগ এক নয়’ – ব্যাখ্যা কর।
  • খ। কোন যুক্তিতে ১+১=১ এবং ১+১=১০ হয় ব্যাখ্যা কর।

Post a Comment

0 Comments
Post a Comment (0)
To Top