তৃতীয় অধ্যায় পাঠ-৬ চিহ্নযুক্ত সংখ্যা এবং কম্পিউটার সিস্টেমে এর উপস্থাপন।
এই পাঠ শেষে যা যা শিখতে পারবে-
- ১। চিহ্নযুক্ত সংখ্যার ধারণা ব্যাখ্যা করতে পারবে।
- ২। চিহ্নযুক্ত সংখ্যা কম্পিউটার সিস্টেমে উপস্থাপনের বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যাখ্যা করতে পারবে।
- ৩। রেজিস্টারের প্রাথমিক ধারণা ব্যাখ্যা করতে পারবে।
- ৪। ২ এর পরিপূরক পদ্ধতিতে চিহ্নযুক্ত সংখ্যার যোগ-বিয়োগ করতে পারবে।
বিভিন্ন গাণিতিক সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে ধনাত্মক ও ঋণাত্মক সংখ্যা ব্যবহার করা হয়। সংখ্যাটি ধনাত্মক নাকি ঋণাত্মক তা বুঝানোর জন্য সাধারণত সংখ্যার পূর্বে চিহ্ন(+ অথবা -) ব্যবহৃত হয়। অর্থাৎ যখন কোন সংখ্যার পূর্বে ধনাত্মক(+) বা ঋণাত্মক(-) চিহ্ন থাকে তখন সেই সংখ্যাকে চিহ্নযুক্ত সংখ্যা বা সাইনড নম্বর বলা হয়।
বাইনারি পদ্ধতিতে চিহ্নযুক্ত সংখ্যা বুঝানোর জন্য প্রকৃত মানের পূর্বে একটি অতিরিক্ত বিট যোগ করা হয়। এ অতিরিক্ত বিটকে চিহ্ন বিট বলে। চিহ্ন বিট 0 হলে সংখ্যাটি ধনাত্মক এবং চিহ্নবিট ১ হলে সংখ্যাটিকে ঋণাত্মক ধরা হয়।
চিহ্নযুক্ত সংখ্যার উপস্থাপনাঃ কম্পিউটার সিস্টেমে চিহ্ন যুক্ত সংখ্যা উপস্থাপনার জন্য তিনটি পদ্ধতি আছে। যথাঃ
- ১। প্রকৃত মান গঠন (Signed magnitude form)
- ২। ১ এর পরিপূরক গঠন (1’s Complement form)
- ৩। ২ এর পরিপূরক গঠন (2’s Complement form)
এক্ষেত্রে তিনটি পদ্ধতিতেই ধনাত্মক সংখ্যার উপস্থাপনা একই। অর্থাৎ ধনাত্মক সংখ্যার ক্ষেত্রে চিহ্ন বিট ছাড়া বাকি অংশটি সংখ্যার মান জ্ঞাপন করে। তবে ঋণাত্মক সংখ্যার ক্ষেত্রে উপস্থাপনা ভিন্ন ভিন্ন হয়।
উপরিউক্ত তিনটি পদ্ধতিতে চিহ্ন যুক্ত সংখ্যা উপস্থাপনার জন্য রেজিস্টার সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা থাকতে হবে। রেজিস্টার হলো একগুচ্ছ ফ্লিপ-ফ্লপ এবং গেইটের সমন্বয়ে গঠিত সার্কিট যা অস্থায়ী মেমরি হিসেবে কাজ করে। এর প্রত্যেকটি ফ্লিপ-ফ্লপ একটি করে বাইনারি বিট সংরক্ষণ করতে পারে। n বিটের একটি রেজিস্টার n বিটের বাইনারি তথ্য ধারণ করতে পারে। ৮-বিট রেজিস্টার, ১৬- বিট রেজিস্টার, ৩২-বিট রেজিস্টার ইত্যাদি- যারা যথাক্রমে ৮, ১৬, ৩২ বিট তথ্য ধারণ করতে পারবে। এই অধ্যায়ের শেষের দিকে রেজিস্টার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
প্রকৃত মান গঠন (Signed magnitude form):
প্রকৃত মান গঠন প্রক্রিয়ায় +5 এবং -5 কে ৮-বিট রেজিস্টারে উপস্থাপন। ৮-বিট রেজিস্টারের ক্ষেত্রে সর্বডানের ৭-বিট হল ডেটা বিট এবং সর্ব বামের বিটটি চিহ্ন বিট। এক্ষেত্রে ধনাত্মক চিহ্নের জন্য চিহ্ন বিট 0 এবং ঋণাত্মক চিহ্নের জন্য চিহ্ন বিট 1।
১ এর পরিপূরক গঠন (1’s Complement form):
১ এর পরিপূরক গঠন প্রক্রিয়ায় +5 এবং -5 কে ৮-বিট রেজিস্টারে উপস্থাপন। ধনাত্মক চিহ্নযুক্ত সংখ্যার ক্ষেত্রে ধনাত্মক চিহ্নের জন্য চিহ্ন বিট 0 এবং বাকি ৭-বিট ব্যবহৃত হয় সংখ্যার প্রকৃত মানের জন্য। ঋণাত্মক চিহ্নযুক্ত সংখ্যার মান নির্ণয়ের জন্য ধনাত্মক চিহ্নযুক্ত সংখ্যার মান নির্ণয় করতে হয়। তারপর চিহ্ন-বিট সহ সবগুলো বিটকে উল্টিয়ে(অর্থাৎ 0 থাকলে ১ এবং ১ থাকলে 0 হয়) ঋণাত্মক চিহ্নযুক্ত সংখ্যার মান নির্নয় করা হয়।
২ এর পরিপূরক গঠন (2’s Complement form):
২ এর পরিপূরক গঠন প্রক্রিয়ায় +5 এবং -5 কে ৮-বিট রেজিস্টারে উপস্থাপন। ধনাত্মক চিহ্নযুক্ত সংখ্যার ক্ষেত্রে ধনাত্মক চিহ্নের জন্য চিহ্ন বিট 0 এবং বাকি ৭-বিট ব্যবহৃত হয় সংখ্যার প্রকৃত মানের জন্য। ঋণাত্মক চিহ্নযুক্ত সংখ্যার মান নির্ণয়ের জন্য প্রথমে সংখ্যাটির ধনাত্মক সংখ্যার মান নির্ণয় করতে হয়। তারপর ধনাত্মক সংখ্যার মানের ১ এর পরিপূরক করতে হয়। শেষে ১ এর পরিপূরকে প্রাপ্ত মানের সাথে বাইনারি ১ যোগ করতে হয়।
২ এর পরিপূরক গঠনের গুরুত্বঃ
- ১। প্রকৃত মান গঠন ও ১ এর পরিপূরক গঠনে +০ এবং -০ এর ভিন্ন ভিন্ন মান পাওয়া যায় যা বাস্তবের সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ। কিন্তু ২ এর পরিপূরক গঠনে +০ এবং -০ এর মান একই যা বাস্তবের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
- ২। ২ এর পরিপূরক গঠনে সরল বর্তনী প্রয়োজন যা দামে সস্তা এবং দ্রুত গতিতে কাজ করে।
- ৩। ২ এর পরিপূরক গঠনে চিহ্ন যুক্ত সংখ্যা এবং চিহ্নবিহীন সংখ্যা যোগ করার জন্য একই বর্তনী ব্যবহার করা যায়।
- ৪। ২ এর পরিপূরক গঠনে যোগ ও বিয়োগের জন্য একই বর্তনী ব্যবহার করা যায়। তাই আধুনিক কম্পিউটারে ২ এর পরিপূরক গঠন ব্যবহৃত হয়।
২ এর পরিপূরক পদ্ধতিতে যোগঃ
- ১। প্রদত্ত চিহ্নযুক্ত সংখ্যা দুটির ২ এর পরিপূরক পদ্ধতিতে মান নির্নয় করতে হবে।
- ২। অতঃপর প্রাপ্ত মানের বাইনারি যোগ করতে হবে।
- ৩। যোগফলে অতিরিক্ত ক্যারি বিট (অর্থাৎ ৮ বিট রেজিস্টারের ক্ষেত্রে যোগফল ৮ বিটের বেশি হলে সর্ব বামের বিটটিকে ক্যারি বিট বলা হয়) থাকলে তা বাদ দিতে হবে।
- ৪। এভাবে প্রাপ্ত সংখ্যাটিই হবে প্রদত্ত সংখ্যা দুটির যোগফল।
উদাহরন-১ঃ ৮-বিট রেজিস্টারের জন্য -২৫ এবং +১২ এর যোগফল নির্ণয়।
উদাহরন-২ঃ ৮-বিট রেজিস্টারের জন্য +২৫ এবং -১২ এর যোগফল নির্ণয়।
উদাহরন-৩ঃ ৮-বিট রেজিস্টারের জন্য -২৫ এবং -১২ এর যোগফল নির্ণয়।
উদাহরন-৪ঃ ৮-বিট রেজিস্টারের জন্য +২৫ এবং +১২ এর যোগফল নির্ণয়।
২ এর পরিপূরক পদ্ধতিতে বিয়োগঃ
- ১। প্রদত্ত চিহ্নযুক্ত সংখ্যা দুটির মধ্যে যে সংখ্যাটি বিয়োগ করতে হবে তার চিহ্ন পরিবর্তন করে তার ২ এর পরিপূরক পদ্ধতিতে মান নির্নয় করতে হবে(অর্থাৎ +৫ থাকলে -৫ এর মান অথবা -৫ থাকলে +৫ এর মান নির্নয় করতে হবে)।
- ২। অপর চিহ্নযুক্ত সংখ্যাটির ২ এর পরিপূরক পদ্ধতিতে মান নির্নয় করতে হবে।
- ৩। অতঃপর প্রাপ্ত মানের বাইনারি যোগ করতে হবে (বিয়োগের ক্ষেত্রেও যোগ করতে হয়)।
- ৪। যোগফলে অতিরিক্ত ক্যারি বিট (অর্থাৎ ৮ বিট রেজিস্টারের ক্ষেত্রে যোগফল ৮ বিটের বেশি হলে সর্ব বামের বিটটিকে ক্যারি বিট বলা হয়) থাকলে তা বাদ দিতে হবে।
- ৫। এভাবে প্রাপ্ত সংখ্যাটিই হবে প্রদত্ত সংখ্যা দুটির যোগফল।
উদাহরন-১ঃ ৮-বিট রেজিস্টারের জন্য -২৫ থেকে +১২ বিয়োগ কর।
উদাহরন-২ঃ ৮-বিট রেজিস্টারের জন্য +২৫ থেকে -১২ বিয়োগ কর।
উদাহরন-৩ঃ ৮-বিট রেজিস্টারের জন্য -২৫ থেকে -১২ বিয়োগ কর।
উদাহরন-৪ঃ ৮-বিট রেজিস্টারের জন্য +২৫ থেকে +১২ বিয়োগ কর।
পাঠ মূল্যায়ন-
- ক। সাইনড নম্বর বা চিহ্নযুক্ত সংখ্যা কাকে বলে?
- ক। চিহ্ন বিট কী?
- খ। চিহ্নযুক্ত সংখ্যা বলতে কি বুঝ? ব্যাখ্যা দাও।
- খ। ২-এর পরিপূরক কেন গুরুত্বপূর্ণ? ব্যাখ্যা কর।
- খ। বিয়োগের কাজ যোগের মাধ্যমে সম্ভব ব্যাখ্যা কর।
উদ্দীপক অনুসারে প্রশ্নের উত্তর দাওঃ
আইসিটি শিক্ষক একাদশ শ্রেণিতে সংখ্যা পদ্ধতি পড়াচ্ছিলেন। কিন্তু একজন ছাত্রের অমনোযোগিতার কারণে তিনি বিরক্ত হয়ে তার রোল নম্বর জিজ্ঞাসা করলেন। ছাত্র উত্তর দিল (31)10। তারপর শিক্ষক ছাত্রের গত শ্রেণির রোল জিজ্ঞাসা করলে উত্তর দিল (15)10। তখন শিক্ষক তাকে বললেন, তোমার অমনোযোগিতার কারণে খারাপ ফল হয়েছে।
ঘ। উদ্দীপকের ছাত্রের দুই শ্রেণির রোলের পার্থক্য শুধুমাত্র যোগের মাধ্যমে বের করে ফলাফলের পরিবর্তন মূল্যায়ন কর।
উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নের উত্তর দাওঃ
সেনহা ও মিতা টেস্টের ফলাফল নিয়ে আলোচনা করছিল। সেনহা বলল,আমি ICT-তে (4C)16 পেয়েছি। মিতা বলল আমি ICT-তে (103)8 নম্বর পেয়েছি। ৫ম শ্রেণীতে পড়ুয়া তাদের ভাই বুঝলনা কে বেশি নম্বর পেয়েছে।
ঘ। ৮ বিট রেজিস্টার ব্যবহার করে ২-এর পরিপূরক পদ্ধতিতে উদ্দীপকের সেনহা ও মিতার প্রাপ্ত নম্বরের পার্থক্য নির্ণয় কর।
উদ্দীপক অনুসারে প্রশ্নের উত্তর দাওঃ
আইসিটি ক্লাসে বিভিন্ন সংখ্যা পদ্ধতি এবং এদের পারস্পারিক রূপান্তর সম্পর্কে পড়াচ্ছিলেন। উদাহরণস্বরূপ (76)8 এবং (48)10 সংখ্যা দুটিকে বাইনারীতে রূপান্তর করে দেখালেন। অতঃপর তিনি এমন একটি পদ্ধতি ব্যাখ্যা করলেন যেটি ব্যবহার করে একই সার্কিট এর মাধ্যমে যোগ ও বিয়োগের কাজ করা যায়। পরবর্তীতে তিনি বিভিন্ন কোড সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে একটি কোডের কথা উল্লেখ করলেন যেটি ব্যবহার করে বর্তমানে যেকোন ভাষাকে কম্পিউটারে ইনপুট দেয়া যায়।
ঘ। উদ্দীপকে উল্লিখিত পদ্ধতি ব্যবহার করে ১ম সংখ্যা থেকে ২য় সংখ্যা বিয়োগ কর এবং পদ্ধতিটির গুরুত্ব বিশ্লেষণ কর।
উদ্দীপক অনুসারে প্রশ্নের উত্তর দাওঃ
ICT শিক্ষক ক্লাসে এসে বোর্ডে (72)8 এবং (3D)16 দুইটি সংখ্যা লিখলেন। অতঃপর তিনি সংখ্যা দুইটিকে বিভিন্ন সংখ্যায় রূপান্তর করে দেখালেন।
ঘ। উদ্দীপকের সংখ্যা দুইটি যোগের মাধ্যমে বিয়োগফল নির্ণয় কর যায় কি? বিশ্লেষণ কর।
উদ্দীপক অনুসারে প্রশ্নের উত্তর দাওঃ
লিমা তার আইসিটি স্যারের কাছে (D)16 ও (7)8 সংখ্যা দুটির যোগফল জানতে চাইল। স্যার লিমাকে যোগফল দেখালো এবং বলল কম্পিউটারের অভ্যন্তরে সমস্ত কর্মকাণ্ড একটি মাত্র অপারেশনের মাধ্যমে হয়। যোগের ক্ষেত্রে এক ধরনের সার্কিট ও ব্যবহৃত হয়।
গ। স্যার যে অপারেশনের ইঙ্গিত দিয়েছেন তার সাহায্যে উদ্দীপকের সংখ্যা দুটি বিয়োগ কর ।
উদ্দীপক অনুসারে প্রশ্নের উত্তর দাওঃ
রাসেল (160.6)8 টাকায়(24)10 টি পেন্সিল ক্রয় করল। তার মধ্যে (8)10 টি পেন্সিল তার ছোট ভাই পাভেলকে দিয়ে দিল।
ঘ। পাভেলকে দেওয়ার পর কতটি পেন্সিল রইল তা শুধুমাত্র যোগের মাধ্যমে বের কর।