দ্বিতীয় অধ্যায় পাঠ-৯ বিভিন্ন নেটওয়ার্ক ডিভাইস সমূহ (মডেম, NIC, রিপিটার, হাব, সুইচ, রাউটার, ব্রিজ, গেটওয়ে।

দ্বিতীয় অধ্যায় পাঠ-৯ বিভিন্ন নেটওয়ার্ক ডিভাইস সমূহ (মডেম, NIC, রিপিটার, হাব, সুইচ, রাউটার, ব্রিজ, গেটওয়ে।

এই পাঠ শেষে যা যা শিখতে পারবে-

  • ১। বিভিন্ন নেটওয়ার্ক ডিভাইসসমূহ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবে।
  • ২। বিভিন্ন নেটওয়ার্ক ডিভাইসসমূহের ব্যবহার বর্ণনা করতে পারবে।
  • ৩। বিভিন্ন নেটওয়ার্ক ডিভাইসসমূহের সুবিধা-অসুবিধা বর্ণনা করতে পারবে।
মডেম- মডেম হচ্ছে একটি নেটওয়ার্ক ডিভাইস বা ইলেকট্রনিকস ডিভাইস যা কম্পিউটারের তথ্যকে আরেক কম্পিউটারে টেলিফোন লাইনের মাধ্যমে পৌঁছে দেয়। মডেম শব্দটি  Modulator ও  Demodulator  সংক্ষিপ্তরূপ। Modulator শব্দের ‘Mo’ এবং Demodulator শব্দের ‘Dem’ নিয়ে ‘Modem’ শব্দটি গঠিত হয়েছে। Modulator এর  কাজ হচ্ছে ডিজিটাল সিগন্যালকে অ্যানালগ সিগন্যালে রূপান্তর করা এবং Demodulator এর  কাজ হচ্ছে অ্যানালগ সিগন্যালকে ডিজিটাল সিগন্যালে রূপান্তর করা।
প্রেরক কম্পিউটারের সাথে যুক্ত মডেম কম্পিউটারের ডিজিটাল সিগন্যালকে অ্যানালগ সিগন্যালে রূপান্তর করে টেলিফোন যোগাযোগ ব্যবস্থা দ্বারা গ্রাহকের নিকট ডেটা বা তথ্য প্রেরণ করে। এভাবে টেলিফোন লাইনের উপযোগী করে ডিজিটাল সিগন্যালকে অ্যানালগ সিগন্যালে পরিবর্তনের প্রক্রিয়াকে মডুলেশন বলে।
গ্রাহক কম্পিউটারের সঙ্গে যুক্ত মডেম সেই অ্যানালগ সিগন্যালকে আবার ডিজিটাল সিগন্যালে পরিণত করে তা কম্পিউটারের ব্যবহারোপযোগী করে।  এভাবে টেলিফোন লাইন থেকে প্রাপ্ত অ্যানালগ সিগন্যালকে ডিজিটাল সিগন্যালে রূপান্তরের প্রক্রিয়াকে ডিমডুলেশন বলে।

NIC- NIC এর পূর্ণরূপ হচ্ছে Network Interface Card ।কম্পিউটারকে নেটওয়ার্ক এর সাথে সংযুক্ত করার জন্য নেটওয়ার্ক ইন্টারফেস কার্ড ব্যবহার করা হয় । এ কার্ডকে ল্যান কার্ড বা নেটওয়ার্ক অ্যাডাপ্টার কার্ডও বলে।এ কার্ড মাদারবোর্ডের বিভিন্ন আকৃতির  স্লটের মধ্যে বসানো থাকে। অধিকাংশ NIC  কার্ড কম্পিউটারের সাথে বিল্ট-ইন থাকে। নেটওয়ার্ক কার্ডে ৪৮ বিটের একটি অদ্বিতীয় কোড থাকে। এই অদ্বিতীয় কোডকে ম্যাক  (MAC- Media Access Control)  অ্যাড্রেস বলে। এই ম্যাক অ্যাড্রেস কার্ডের রমে সংরক্ষিত  থাকে। নেটওয়ার্ক ইন্টারফেস কার্ড পিসি এবং ডেটা কেবলের মধ্যে সিগন্যাল আদান-প্রদানের কাজটি সমন্বয় করে থাকে।

রিপিটার- নেটওয়ার্ক মিডিয়ার মধ্য দিয়ে ডেটা সিগনাল প্রবাহের সময় নির্দিষ্ট দূরত্ব অতিক্রম করার পর এটেনুয়েশনের কারণে সিগনাল আস্তে  আস্তে  দূর্বল হয়ে পড়ে। তখন এই সিগনালকে এমপ্লিফাই বা শক্তিশালী করে গন্তব্য পর্যন্ত পৌঁছাতে হয়। মাঝামাঝি অবস্থানে থেকে এই কাজটি যে ডিভাইস করে থাকে তাকে রিপিটার বলে।

হাব- হাব একটি নেটওয়ার্ক ডিভাইস যার মাধ্যমে কম্পিউটারসমূহ পরস্পরের সাথে যুক্ত থাকে। কম্পিউটারের সংযোগ সংখ্যার উপর হাবের  ক্ষমতা নির্ভর করে। হাবের মধ্যে অনেকগুলো পোর্ট থাকে। ডেটা প্যাকেট একটি পোর্টে আসলে এটি অন্য পোর্টে কপি হয় যাতে সব সেগমেন্ট সব প্যাকেটসমূহ দেখতে পারে। স্টার টপোলজির ক্ষেত্রে হাব হচ্ছে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণকারী ডিভাইস।
হাবের সুবিধা-
  • ১। দাম কম।
  • ২। বিভিন্ন মিডিয়ামকে সংযুক্ত করতে পারে।
হাবের অসুবিধা-
  • ১। নেটওয়ার্ক ট্রাফিক বৃদ্ধি পায়।
  • ২। ডেটা আদান-প্রদানে বাধার সম্ভাবনা থাকে।
  • ৩। ডেটা ফিল্টারিং সম্ভব হয় না।

সুইচ- সুইচ একটি নেটওয়ার্ক ডিভাইস যার মাধ্যমে নেটওয়ার্কের  মধ্যে সার্ভার, ওয়ার্কস্টেশন এবং বিভিন্ন পেরিফেরিয়াল ডিভাইস সমূহ সংযুক্ত থাকে।হাবের সাথে সুইচের পার্থক্য হলো সুইচ প্রেরক প্রান্ত  থেকে প্রাপ্ত ডেটা প্রাপক কম্পিউটারের সুনির্দিষ্ট পোর্টটিতে পাঠিয়ে দেয়। কিন্তু হাব ঐ ডেটা সিগন্যাল প্রাপক কম্পিউটারের সবগুলো পোর্টেই পাঠায়।
সুইচের সুবিধা-
  • ১। ডেটা আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে বাধার সম্ভাবনা কমায়।
  • ২। ভার্চুয়াল LAN  ব্যবহার করে ব্রডকাস্ট নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
সুইচের অসুবিধা-
  • ১। হাবের তুলনায় মূল্য কিছুটা বেশি।
  • ২। ডেটা ফিল্টারিং সম্ভব নয়।
  • ৩। কনফিগারেশন তুলনামূলকভাবে জটিল।

ব্রিজ- ব্রিজ একাধিক নেটওয়ার্ককে সংযুক্ত করে একটি বৃহৎ নেটওয়ার্ক তৈরি করে। এটি অনেকটা সুইচ বা হাব এর মতো । এক্ষেত্রে পার্থক্য হলো- হাব বা সুইচ একই নেটওয়ার্কের বিভিন্ন নোডকে সংযুক্ত করে অন্যদিকে ব্রিজ একাধিক ছোট নেটওয়ার্ককে সংযুক্ত করে।

রাউটার- এটি একটি বুদ্ধিমান ইন্টারনেটওয়ার্ক কানেকটিভিটি ডিভাইস যা দুই বা ততোধিক নেটওয়ার্কের মধ্যে ডেটা আদান-প্রদানের ব্যবস্থা  করে। ডেটা উৎস ও গন্তব্যের উপর ভিত্তি করে রাউটার ডেটা স্থানান্তরের জন্য সহজ, নিরাপদ ও কম দূরত্বের  পথটি বেছে নেয়। এটি LAN , MAN এবং WAN এ তিন ধরণের নেটওয়ার্কেই কাজ করে। এক নেটওয়ার্ক থেকে অন্য নেটওয়ার্কে ডেটা পাঠানোর পদ্ধতিকে রাউটিং বলে।
রাউটারের সুবিধাসমূহ:
  • ১। ডেটা ট্রান্সমিশনের ক্ষেত্রে বাধার সম্ভাবনা কমায়।
  • ২। ডেটা ফিল্টারিং সম্ভব হয়।
  • ৩। বিভিন্ন ধরনের নেটওয়ার্ক যেমন-ইথারনেট, টোকেন, রিং ইত্যাদিকে সংযুক্ত করতে পারে।
রাউটারের অসুবিধা:
  • ১। রাউটারের দাম বেশি।
  • ২। রাউটার একই প্রোটোকল নেটওয়ার্ক ছাড়া সংযুক্ত হতে পারে না।
  • ৩। কনফিগারেশন তুলনামূলক জটিল।
  • ৪। ধীরগতিসম্পন্ন।

গেটওয়ে- গেটওয়ে ভিন্ন প্রটোকল বিশিষ্ট নেটওয়ার্ক সমুহকে সংযুক্ত করে। ভিন্ন নেটওয়ার্ক সংযুক্ত করার সময় গেটওয়ে  প্রটোকল ট্রান্সলেশন করে থাকে। বিভিন্ন নেটওয়ার্ক ডিবাইস যেমন – হাব, সুইচ এবং রাউটার ইত্যাদি ডিবাইস সমূহ প্রটোকল ট্রান্সলেশনের সুবিধা দেয় না।
গেটওয়ের সুবিধাসমূহ-
  • ১। ডেটা ট্রান্সমিশনের ক্ষেত্রে বাধার সম্ভাবনা কম।
  • ২। বিভিন্ন প্রটোকলবিশিষ্ট নেটওয়ার্ক সংযুক্ত করতে পারে।
গেটওয়ের অসুবিধাসমূহ-
  • ১। এটি ধীর গতিসম্পন্ন।
  • ২। অন্যান্য ডিভাইসের চেয়ে ব্যয়বহুল।
  • ৩। কনফিগারেশন করা তুলনামূলক জটিল।

একটি নেটয়ার্কে বিভিন্ন নেটয়ার্ক ডিভাইস এর ব্যবহার –

পাঠ মূল্যায়ন-

  • ক। মডেম কী?
  • ক। NIC কী?
  • ক। সুইচ/হাব/রাউটার কী?
  • ক। গেটওয়ে/ব্রিজ কী?
  • ক। রিপিটার কী?

  • খ। শুধু মডুলেশন বা ডিমডুলেশন কার্যকর পদ্ধতি হতে পারে না- ব্যাখ্যা কর।
  • খ। তথ্য আদান-প্রদানে মডেম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে -ব্যাখ্যা কর।
  • খ। সুইস এবং হাবের মধ্যে কোনটি অধিকতর সুবিধাজনক? ব্যাখ্যা কর।
  • খ। ডেটা ট্রান্সমিশনে দুর্বল সিগন্যালকে শক্তিশালী করার উপায়-ব্যাখ্যা কর।

Post a Comment

0 Comments
Post a Comment (0)
To Top