প্রথম অধ্যায় পাঠ-৫: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রোবট, এক্সপার্ট সিস্টেম।

প্রথম অধ্যায় পাঠ-৫: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রোবট, এক্সপার্ট সিস্টেম।

এই পাঠ শেষে যা যা শিখতে পারবে-

  • ১। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (Artificial Intelligence) ব্যাখ্যা করতে পারবে।
  • ২। বিভিন্ন এক্সপার্ট সিস্টেম এবং তাদের ব্যবহার ব্যাখ্যা করতে পারবে।
  • ৩। একটি সাধারণ রোবটের বিভিন্ন উপাদান গুলো বর্ননা করতে পারবে।
  • ৪। রোবটের বৈশিষ্ট্য এবং এর উল্লেখযোগ্য ব্যবহার বর্ননা করতে পারবে।
  • ৫। এক্সপার্ট সিস্টেম এবং রোবট এর মধ্যে পার্থক্য করতে পারবে।

কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা(Artificial Intelligence): মানুষ যেভাবে চিন্তা-ভাবনা করে সিদ্ধান্ত নেয়, কৃত্তিম উপায়ে যদি কোন যন্ত্রকে সেভাবে চিন্তা ভাবনা করানো যায়, তখন সেই যন্ত্রের বুদ্ধিমত্তাকে কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা বলে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জনক  ব্রিটিশ বিজ্ঞানী ও গণিতবিদ অ্যালান টুরিং (Alan Mathison Turing)।
কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিদ্যার একটি শাখা হচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহারের ক্ষেত্র হচ্ছে এক্সপার্ট সিস্টেম, রোবটিক্স ইত্যাদি। এক্সপার্ট সিস্টেম এবং রোবটিক্সে কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা প্রয়োগ করার জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রোগ্রামিং ভাষা যেমন- LISP, CLISP, PROLOG, C/C++, JAVA ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়।
এক্সপার্ট সিস্টেমঃ এক্সপার্ট সিস্টেম হলো কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত এমন একটি সিস্টেম যা মানুষের চিন্তা ভাবনা করার দক্ষতা এবং সমস্যা সমাধানের সক্ষমতাকে একত্রে ধারণ করে। যা মানব মস্তিস্কের মত পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে সর্বোচ্চ সাফল্য লাভের উদ্দেশ্যে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এই সিস্টেমে বিশাল তথ্য ভাণ্ডার দিয়ে সমৃদ্ধ থাকে, যাকে নলেজবেজ বলা হয়। এই নলেজবেজে যে কোন নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর প্রশ্ন করে উত্তর জেনে নেওয়া যায়।
  • নলেজবেজ- ক এর বাবা ঘ এবং ঘ এর ছেলে প
  • ক ও প এর মধ্যে সম্পর্ক কি?
এক্সপার্ট সিস্টেম এর ব্যবহারঃ
  •  ১। রোগীর রোগ নিরাময়ে
  •  ২। বিভিন্ন ডিজাইনের ভূল সংশোধনে
  •  ৩। জেট বিমান চালনায় ও সিডিউল তৈরিতে
  •  ৪। ভূগর্ভস্থ তেল অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে ইত্যাদি।
বর্তমানে ব্যবহৃত বিভিন্ন এক্সপার্ট সিস্টেমসমূহ এবং তাদের কাজঃ   
  • Deep blue: দাবা খেলার বিচারক হিসেবে কাজ করা।
  • Internist: চিকিৎসা পরামর্শ প্রদান এবং নির্ভূলভাবে জটিল রোগের সার্জারি করা।
  • Mycin and Cadulus: চিকিৎসা পরামর্শ প্রদান করা।
  • Mycsyma: গাণিতিক সমস্যা সমাধান করা।
  • Dendral: প্রোগ্রামিং শেখানো।
  • Prospector: খনিজ পদার্থ ও আকরিক অনুসন্ধান করা।

রোবোটিক্সঃ প্রযুক্তির যে শাখায় রোবটের ডিজাইন, গঠন, পরিচালন ও প্রয়োগক্ষেত্র সম্পর্কে আলোচনা করা হয়, সেই শাখাকে রোবোটিক্স বলা হয়।
রোবটঃ রোবট হচ্ছে কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত এক ধরণের ইলেকট্রো-মেকানিক্যাল যান্ত্রিক ব্যবস্থা যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বা কোন ব্যক্তির নির্দেশে কাজ করতে পারে। এটি তৈরী হয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার নীতিতে যা Computer program দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। রোবট মানুষ কিংবা বিভিন্ন বুদ্ধিমান প্রাণীর মতো কাজ করতে পারে। এটি মানুষ ও মেশিন উভয় কর্তৃক পরিচালিত কিংবা দূর নিয়ন্ত্রিত হতে পারে।
একটি সাধারণ রোবটে নিচের উপাদান বা অংশগুলো থাকেঃ 
  • প্রসেসরঃ রোবটের মূল অংশ যেখানে রোবটকে কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রন করার একটি প্রোগ্রাম সংরক্ষিত থাকে। যা রোবটের সকল কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ করে।
  • পাওয়ার সিস্টেমঃ লেড এসিড ব্যাটারি দিয়ে রোবটের পাওয়ার দেওয়া হয় যা রিচার্জেবল।
  • ইলেকট্রিক সার্কিটঃ রোবটের হাইড্রোলিক ও নিউমেট্রিক সিস্টেমকে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়।
  • অ্যাকচুয়েটরঃ রোবটের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের নডাচড়া করার জন্য বৈদ্যুতিক মটরের সমন্বয়ে তৈরি বিশেষ ব্যবস্থা হলো অ্যাকচুয়েটর।
  • সেন্সরঃ রোবটের ইনপুট যন্ত্র হলো সেন্সর। যার মাধ্যমে পরিবেশ থেকে ইনপুট নেয়।
  • মুভেবল বডিঃ রোবটে চাকা, যান্ত্রিক পা বা স্থানান্তর করা যায় এমন যন্ত্রপাতি।

রোবটের বৈশিষ্ট্যঃ
  • ১। রোবট সফটওয়্যার নিয়ন্ত্রিত যা সুনির্দিষ্ট কোন কাজ দ্রুত ও নিখুঁতভাবে সম্পন্ন করতে পারে।
  • ২। রোবট পূর্ব থেকে দেওয়া নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করে।
  • ৩। রোবট বিরতিহীনভাবে কাজ করতে পারে।
  • ৪। রোবট যেকোনো ঝুঁকিপূর্ণ বা অস্বাস্থ্যকর স্থানে কাজ করতে পারে।
  • ৫। এটি এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ঘুরতে বা স্থানান্তরিত হতে পারে।
  • ৬। দূর থেকে লেজার রশ্মি বা রেডিও সিগন্যালের সাহায্যে রোবট নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

রোবটে উল্লেখযোগ্য  ব্যবহারগুলো ঃ
  • ১। রোবটকে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয় কম্পিউটার-এইডেড ম্যানুফেকচারিং এ, বিশেষ করে যানবাহন ও গাড়ি তৈরির কারখানায়।
  • ২। যে সমস্থ কাজ করা স্বাভাবিকভাবে মানুষের জন্য বিপজ্জনক যেমন- বিস্ফোরক নিস্ক্রিয়করণ, ডুবে যাওয়া জাহজের অনুসন্ধান, খনি অভ্যন্তরের কাজ ইত্যাদি কঠোর শারীরিক পরিশ্রমের বা বিপদজ্জনক ও জটিল কাজগুলো রোবটের সাহায্যে করা যায়।
  • ৩। কারখানায় কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত রোবটের সাহায্যে নানা রকম বিপজ্জনক ও পরিশ্রমসাধ্য কাজ যেমন- ওয়েল্ডিং, ঢালাই ,ভারী মাল উঠানো বা নামানো যন্ত্রাংশ সংযোজন ইত্যাদির ক্ষেত্রে রোবটি বহুলভাবে ব্যবহৃত হয়।
  • ৪। সামরিক ক্ষেত্রেও রোবটের উল্লেখযোগ্য ব্যবহার হচ্ছে বোমা অনুসন্ধান কিংবা ভূমি মাইন সনাক্ত করা।
  • ৫। চিকিৎসাক্ষেত্রে রোবট সার্জনদের জটিল অপারেশনে ও নানা ধরণের কাজে সহায়তা করে থাকে।
  • ৬। মহাকাশ গবেষণার ক্ষেত্রে রোবটের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। মহাকাশ অভিযানে এখন মানুষের পরিবর্তে বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য সম্বলিত রোবট ব্যবহৃত হচ্ছে।

পাঠ মূল্যায়ন- 

জ্ঞানমূলক প্রশ্নসমূহঃ
  • ক। আর্টিফিসিয়াল ইনটেলিজেন্ট বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা  কী?
  • ক। এক্সপার্ট সিস্টেম কী?
  • ক। রোবটিক্স কী?
  • ক। রোবট কী?
অনুধাবনমূলক প্রশ্নসমূহঃ
  • খ। “যন্ত্র স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ করে” – ব্যাখ্যা কর।
  • খ।  ঝুঁকিপূর্ণ কাজে ব্যবহৃত প্রযুক্তিটি ব্যাখ্যা কর।
  • খ। “ঝুঁকিপূর্ণ কাজে যন্ত্র ব্যবহার সুবিধাজনক” – ব্যাখ্যা কর।
  • খ। রোবটে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ভূমিকা ব্যাখ্যা কর।
  • খ। “কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কম্পিউটার বিজ্ঞানের একটি গুরুত্তপূর্ণ শাখা” – ব্যাখ্যা কর।
  • খ। চিকিৎসা সেবায় আর্টিফিসিয়াল ইন্টিলিজেন্স কীভাবে সম্পর্কিত ? ব্যাখ্যা কর।
  • খ। “ঝুঁকিপূর্ণ কাজে রোবট ব্যবহৃত হয়” – ব্যাখ্যা কর।
  • খ। “কম্পিউটার একটি প্রোগ্রাম নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র” – ব্যাখ্যা কর।
  • খ। রোবট কীভাবে মানুষের কাজকে সহজ করেছে? – ব্যাখ্যা কর।

Post a Comment

0 Comments
Post a Comment (0)
To Top