দ্বিতীয় অধ্যায় পাঠ-৭ মোবাইল যোগাযোগ।

দ্বিতীয় অধ্যায় পাঠ-৭ মোবাইল যোগাযোগ।

এই পাঠ শেষে যা যা শিখতে পারবে-

  • ১। সেলুলার ফোনের ধারণা লাভ করবে।
  • ২। মোবাইল ফোনের বিভিন্ন প্রযুক্তি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবে।
  • ২। মোবাইল ফোনের বিভিন্ন প্রজন্ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবে।

সেলুলার ফোনের ইতিহাস শুরু হয় ১৯২০ সালে, মোবাইল রেডিও আবিস্কারের পর। ১৯৪০ সালে মার্টিন কুপার মটোরলা (সিলিকন ভ্যালি কোম্পানীর প্রতিষ্ঠাতা) আধুনিক মোবাইল ফোন আবিস্কার করে। তাই তাকে মোবাইল ফোনের জনক বলা হয়। এই সময় হতে যুক্তরাষ্ট্রে মোবাইল ফোন শুরু হয়। পরে ১৯৫০ সালে ইউরোপ ও ২য় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালিন সময় যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী সর্বপ্রথম মোবাইল ফোন ব্যবহার শুরু করে।
ইংরেজী শব্দ থেকে মোবাইল ফোন শব্দটি এসেছে। শব্দটির বাংলা অর্থ সরানো, নাড়ানো, চলমান। তাই চলমান অবস্থায় তারবিহীন যে সকল ফোন ব্যবহার করা হয় তাকে মোবাইল ফোন বলে।
মোবাইল ফোন হলো এক ধরণের ইলেকট্রনিক ডিভাইস যার সাহায্যে সেলুলার নেটওয়ার্ক প্রযুক্তি ব্যবহার করে উভয়মুখী বা দ্বিমুখী টেলিযোগাযোগ করা যায়। মোবাইল ফোনকে অনেক সময় সেলুলার ফোন, সেলফোন বা হ্যান্ড ফোনও বলা হয়।
দুটি চলনশীল ডিভাইস অথবা একটি চলনশীল ও অন্যটি স্থির ডিভাইসের মধ্যে ডেটা ও তথ্য আদান প্রদান করার লক্ষ্যে ডিজাইনকৃত সিষ্টেমকে মোবাইল টেলিফোন সিস্টেম বলে। চলমান ডিভাইসকে মোবাইল স্টেশন বা মোবাইল সেট এবং স্থির ডিভাইসকে Land Unit  বলা হয়।
সেলুলার টেলিফোন হলো এক ধরণের শর্ট-ওয়েভ অ্যনালগ বা ডিজিটাল টেলিযোগাযোগ যেখানে কোনো গ্রাহকের একটি মোবাইল ফোন থেকে কাছাকাছি অবস্থিত কোন ট্রান্সমিটারের মধ্যে ওয়ারলেস সংযোগ থাকে। ট্রান্সমিটারের কাভারেজ এরিয়াকে ছোট ছোট অংশে ভাগ করা হয়। এর প্রতিটি ভাগকে বলে সেল। সেলুলার রেডিও সিষ্টেমে রেডিও সার্ভিসের সাথে ভূমি এলাকায় সিগনাল বা সংকেত সরবরাহ করা হয় যা নিয়মিত আকারের সেলে বিভক্ত। সেল ষড়ভুজাকার, বর্গাকার, বৃত্তাকার বা অন্য কোন অনিয়মিত আকারের হতে পারে। যদিও ষড়ভুজাকারই প্রথাগত।
সেল সিগন্যাল এনকোডিংঃ বিভিন্ন ট্রান্সমিটার থেকে প্রেরিত সিগন্যালগুলো আলাদা করার জন্য ব্যবহৃত এনকোডিং পদ্ধতিকে বলা হয় সেল সিগন্যাল এনকোডিং। সেল সিগন্যাল এনকোডিং এর প্রকারভেদঃ
  • FDMA- Frequency Division Multiple Access
  • TDMA- Time Division Multiple Access
  • CDMA- Code Division Multiple Access

মোবাইল ফোন প্রযুক্তির প্রকারভেদঃ বর্তমানে প্রচলিত মোবাইল ফোন প্রযুক্তিকে প্রধানত দুইভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
  1. GSM- Global System For Mobile Communication.
  2. CDMA- Code Division Multiple Access.

জিএসএম (GSM)ঃ GSM হল TDMA (Time Division Multiple Access) এবং FDMA (Frequency Division Multiple Access) এর সম্মিলিত  একটি চ্যানেল অ্যাকসেস পদ্ধতি। এই প্রযুক্তিতে মোবাইল ডেটা ট্রান্সমিশনের ক্ষেত্রে উচ্চগতির প্রযুক্তি GPRS(General Packet Radio Service) এবং EDGE(Enhanced Data Rate for GSM Evolution) ব্যবহৃত হয়।
জিএসএম (GSMএর বৈশিষ্ট্যসমূহঃ 
  1. সেল কাভারেজ এরিয়া ৩৫ কি.মি.।
  2. বিদ্যুৎ খরচ তুলনামূলকভাবে বেশি(২ ওয়াট)।
  3. ডেটা ট্রান্সফার রেট তুলনামূলক কম (৫৬kbps)।
  4. আন্তর্জাতিক রোমিং সুবিধা আছে।
  5. ব্যবহৃত SIM কার্ড সহজলভ্য এবং যেকোন হ্যান্ডসেটে ব্যবহারের করা যায়।

সিডিএমএ (CDMA)ঃ এই প্রযুক্তিতে ডেটা পাঠানো হয় ইউনিক কোডিং পদ্ধতিতে। CDMA যে পদ্ধতিতে ডেটা আদান-প্রদান করে তাকে স্প্রেড স্পেকট্রাম বলা হয়। এটি একাধিক ব্যবহারকারীকে একই ফ্রিকোয়েন্সির ব্যান্ড শেয়ার করার সুবিধা দিয়ে থাকে ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক রেডিয়েশন কম হওয়ায় এই প্রযুক্তিকে গ্রীণফোন প্রযুক্তি বলা হয়। মোবাইল অপারেটর সিটিসেল এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে।
সিডিএমএ (CDMA) এর বৈশিষ্ট্যসমূহঃ 
  1. সেল কাভারেজ এরিয়া ১১০ কি.মি.।
  2. বিদ্যুৎ খরচ তুলনামূলকভাবে কম।
  3. ডেটা ট্রান্সফার রেট তুলনামূলক বেশি (154kbps-614 kbps)।
  4. আন্তর্জাতিক রোমিং সুবিধা নেই।
  5. ব্যবহৃত RUIM কার্ড যেকোন হ্যান্ডসেটে ব্যবহারের করা যায়।

মোবাইল ফোনের বিভিন্ন প্রজন্মঃ মোবাইল ফোনের ক্রমবর্ধমান ব্যবহার ও উন্নয়নের  এক একটি পর্যায় বা ধাপকে মোবাইল ফোনের প্রজন্ম নামে অবিহিত করা হয়।  এ পর্যন্ত আবিস্কৃত মোবাইল ফোনের চারটি প্রজন্মে ভাগ করা যায়। নিচে এসব প্রজন্মের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।

 প্রথম প্রজন্ম (১৯৫০-১৯৮৯) :
  • ১। এই প্রজন্মে এনালগ পদ্ধতির রেডিও সিগনাল ব্যবহৃত হয়।
  • ২। সেল সিগনাল এনকোডিং হলো  FDMA।
  • ৩। সিগনাল ফ্রিকোয়েন্সি তুলনামুলক কম।
  • ৪। কথোপকথন চলা অবস্থায় ব্যবহারকারীর অবস্থানের পরিবর্তন হলে ট্রান্সমিশন বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
  • ৫। এতে মাইক্রোপ্রসেসর ও সেমিকন্ডাক্টর প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়।
  • ৬। একই এলাকায় অন্য মোবাইল ট্রান্সমিটারের দ্বারা সৃষ্ট রেডিও ইন্টারফারেন্স নেই।
  • ৭। আন্তর্জাতিক রোমিং সুবিধা চালূ ছিলো না।
দ্বিতীয় প্রজন্ম (১৯৯০-২০০০) :
  • ১। এই প্রজন্মে ডিজিটাল পদ্ধতির রেডিও সিগনাল ব্যবহৃত হয়।
  • ২। সেল সিগনাল এনকোডিং হলো  FDMA, TDMA, CDMA
  • ৩। সেমিকন্ডাক্টর প্রযুক্তি এবং মাইক্রোওয়েভ ডিভাইসের অগ্রগতির ফলে মোবাইল কমিউনিকেশনে ডিজিটাল ট্রান্সমিশন সম্ভব হয়।
  • ৪। উন্নত মানের অডিও এর জন্য ডিজিটাল মডুলেশন ব্যবহৃত হয়।
  • ৫। ডেটা স্থানান্তরের গতি অনেক বেশী।
  • ৬। ডেটার প্রতারনা রোধে সহায়তা করে।
  • ৭। সর্বপ্রথম প্রিপেইড পদ্ধতি চালূ হয়।
  • ৮। সীমিতমাত্রায় আন্তর্জাতিক রোমিং সুবিধা চালূ হয়।
  • ৯। মোবাইল ডেটা ন্থানান্তরের জন্য প্যাকেট সুইচ নেটওয়ার্ক পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়।
  • ১০। এমএমএস(MMS) ও এসএমএস(SMS) সেবা কার্যক্রম চালু হয়।
  • ১১। জিএসএম পদ্ধতিতে ডেটা ও ভয়েস প্রেরন করা সম্ভব হয়।
  • ১২। কথোপকথন চলা অবস্থায় ব্যবহারকারীর অবস্থানের পরিবর্তন হলে ট্রান্সমিশন অবিচ্ছিন্ন থাকে।
  • ১৩। ক্ষেত্র বিশেষে অন্য মোবাইল সার্ভিস প্রোভাইডারের ট্রান্সমিটারের দ্বারা সৃষ্ট রেডিও ইন্টারফারেন্স হয়।
তৃতীয় প্রজন্ম (২০০১-২০০৮)ঃ 
  • ১। ডেটা রুপান্তরের কাজে প্যাকেট সুইচিং ও সার্কিট সুইচিং উভয় পদ্ধতিই ব্যবহৃত হয়। তবে প্যাকেই সুইচিং পদ্ধতির সাহায্যে খুব দ্রুত ছবি ও ভয়েস আদান প্রদান করা হয়।
  • ২। মডেম সংযোজনের মাধ্যমে মোবাইল ফোনে ইন্টারনেটের ব্যবহার এবং ডেটা আদান প্রদানের নতুন এক মাত্রা যোগ হয়।
  • ৩। EDGE  পদ্ধতি কার্যকর হয়। ফলে অধিক পরিমান ডেটা স্থানান্তর হয়।
  • ৪। ডেটা স্থানান্তরের গতি 2 Mbps এর অধিক।
  • ৫। মোবাইল ব্যাংকিং, ই-কমার্স ইত্যাদি সেবা কার্যক্রম চালু হয়।
  • ৬। আন্তর্জাতিক রোমিং সুবিধা চালু হয়।
চতুর্থ প্রজন্ম (২০০৯-বর্তমান :
  • ১। 4G এর গতি 3G এর চেয়ে প্রায় 50গুন বেশী। এর প্রকৃত ব্যান্ড উইথ 10 Mbps আশা করা হচ্ছে।
  • ২। টেলিভিশনের অপেক্ষাকৃত উন্নতমানের ছবি এবং ভিডিও লিংক প্রদান করবে।
  • ৩। আইপি নির্ভর ওয়ারলেস নেটওয়ার্ক সিস্টেম কাজ করবে।

পাঠ মূল্যায়ন-

  • ক। CDMA/FDMA/TDMA কী?
  • ক। GSM কী?
  • খ। 2G ও 3G এর মধ্যে কোনটি বেশি সুবিধাজনক? ব্যাখ্যা কর।

Post a Comment

0 Comments
Post a Comment (0)
To Top