দ্বিতীয় অধ্যায় পাঠ-৪ ডেটা কমিউনিকেশনের মাধ্যম, তার মাধ্যম, কো-এক্সিয়েল ক্যাবল, টুইস্টেড পেয়ার ক্যাবল, অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল।
এই পাঠ শেষে যা যা শিখতে পারবে-
- ১। ডেটা কমিউনিকেশনের মাধ্যম সম্পর্কে ধারণা লাভ করবে।
- ২। তার মাধ্যমের প্রকারভেদ সম্পর্কে জানতে পারবে।
- ৩। কো-এক্সিয়াল ক্যাবল সম্পর্কে জানতে পারবে।
- ৪। টুইস্টেড পেয়ার ক্যাবল সম্পর্কে জানতে পারবে।
- ৫। অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল সম্পর্কে জানতে পারবে।
ডেটা কমিউনিকেশনের মাধ্যম: ডেটা আদান-প্রদানের জন্য প্রেরক ও প্রাপকের মধ্যে সংযোগ স্থাপনের দরকার। এই সংযোগকে চ্যানেল বা মাধ্যম বলে। এই মাধ্যম দুই ধরণের হতে পারে। যেমন-
১। গাইডেড মিডিয়া বা তার মাধ্যম বা ক্যবল মাধ্যমঃ তার মাধ্যম আবার তিন ধরণের। যেমন-
- ক) কো-এক্সিয়েল ক্যাবল
- খ) টুইস্টেড পেয়ার ক্যাবল
- গ) অপটিক্যাল ফাইবার বা ফাইবার অপটিক ক্যাবল
২। আনগাইডেড মিডিয়া বা তারবিহীন মাধ্যমঃ তারবিহীন মাধ্যম আবার তিন ধরণের। যেমন-
- ক) রেডিও ওয়েব
- খ) মাইক্রোওয়েভ
- গ) ইনফ্রারেড
গাইডেড মিডিয়া বা তার মাধ্যম বা ক্যাবল মাধ্যমঃ
কো-এক্সিয়েল ক্যাবলঃ দুটি বিদ্যুৎ পরিবাহী তার ও অপরিবাহী পদার্থের সাহায্যে এ ক্যাবল তৈরি করা হয়। ভেতরের পরিবাহী তারটি কপার ওয়্যার যার মধ্য দিয়ে ডেটা প্রবাহিত হয়। ভেতরের পরিবাহী ও বাইরের পরিবাহী তারকে পৃথক রাখার জন্য এদের মাঝখানে অন্তরক পদার্থ হিসেবে ফোমের ইন্সুলেশন ব্যবহার করা হয় এবং বাইরের পরিবাহী তারকে প্লাস্টিকের জ্যাকেট দ্বারা ডেকে রাখা হয়। সাধারনত BNC কানেক্টর দিয়ে কানেকশন দেওয়া হয়।
কো-এক্সিয়েল ক্যাবলের অংশ সমূহ-
- কপার ওয়্যার: এর মধ্য দিয়ে ডেটা প্রবাহিত হয়।
- ফোমের ইনসুলেশন: কপার ওয়্যার যাতে বেঁকে বা কুঁচকে না যায় সেজন্য ব্যবহৃত হয়।
- কপার মেস: বাইরের তাপ, চাপ ও EMI থেকে কপার ওয়্যারকে রক্ষা করে যাতে নির্বিঘ্নে ডেটা চলাচল করতে পারে অর্থাৎ ইহা ভিতরের তারে প্রেরিত উপাত্ত সিগনালের ব্যাতিচার রোধ করে।
- আউট সাইড ইনসুলেশন: তার যাতে নষ্ট না হয়ে যায় সেজন্য এটা ব্যবহৃত হয়।
কো-এক্সিয়েল ক্যাবল দুই প্রকার। যথা-
থিননেট(thinnet):
- পুরুত্ব : ০.২৫ ইঞ্চি
- ট্রান্সমিশন ডিসটেন্স : ১৮৫ মিটার (রিপিটার ছাড়া)
- ট্রান্সমিশন স্পীড : ১০Mbps
থিকনেট(thicknet):
- পুরুত্ব : ০.৫ ইঞ্চি
- ট্রান্সমিশন ডিসটেন্স : 500 মিটার(রিপিটার ছাড়া)
- ট্রান্সমিশন স্পীড : ১০Mbps
কো-এক্সিয়াল ক্যাবেলের সুবিধাসমূহ-
- ১। এ ধরনের ক্যাবলের ট্রান্সমিশন লস অপেক্ষাকৃত কম হয়।
- ২। ডেটা স্থানান্তরের গতি বেশি।
- ৩। অ্যানালগ এবং ডিজিটাল উভয় ডেটা ট্রান্সমিশনে এ কেবল ব্যবহৃত হয়।
- ৪। টুইস্টেড পেয়ার কেবল অপেক্ষা এ কেবলের মাধ্যমে অধিক দূরত্বে তথ্য পাঠানো যায়।
- ৫। এটি ফাইবার অপটিক কেবল অপেক্ষা কম ব্যয়বহুল এবং সহজে বহনযোগ্য।
কো-এক্সিয়াল ক্যাবলের অসুবিধাসমূহ−
- ১। ডেটা ট্রান্সফার রেট নির্ভর করে তারের দৈর্ঘ্যের উপর।
- ২। কো-এক্সিয়াল কেবল টুইস্টেড পেয়ার কেবল অপেক্ষা কিছুটা ব্যয়বহুল।
কো-এক্সিয়াল ক্যাবলের ব্যবহার-
- ১। টেলিভিশন নেটওয়ার্ক
- ২। ডিশ টিভি বা ক্যাবল টিভি নেটওয়ার্ক
- ৩। সিসি টিভি নেটওয়ার্ক
- ৪। লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্কে বহুল ব্যবহিত হয়।
টুইস্টেড পেয়ার ক্যাবলঃ টুইস্টেড পেয়ার ক্যাবলের মধ্যে দিয়ে সিগন্যাল ট্রান্সমিট করার জন্য দুটি পরিবাহী কপার বা তামার তারকে পরস্পর সমভাবে পেঁচিয়ে টুইস্টেড পেয়ার ক্যাবল তৈরি করা হয়। পেঁচানো তার দুটিকে পৃথক রাখার জন্য এদের মাঝে অপরিবাহী পদার্থ ব্যবহার করা হয়। এধরনের ক্যাবলে সাধারণত মোট ৪ জোড়া তার ব্যবহার করা হয়। সাধারনত RJ45 কানেক্টর দিয়ে কানেকশন দেওয়া হয়।
টুইস্টেড পেয়ার ক্যাবল দুই প্রকার। যথা-
১। ইউটিপি (Unshielded Twisted Pair-UTP)- ইউটিপি ক্যাবল মূলত একাধিক জোড়া টুইস্টেড পেয়ারের সমষ্টি যা আবার প্লাস্টিক আবরণে মোড়ানো থাকে।
- ব্যান্ডউইথ : ১০ Mbps
- ট্রান্সমিশন ডিসটেন্স : ১৫৫ মিটার (রিপিটার ছাড়া)
২। এসটিপি (Shielded Twisted Pair-STP)- শিল্ডেড টুইস্টেড পেয়ার ক্যাবলে এক বা একাধিক টুইস্টেড ক্যাবল থাকে যা ফয়েল ও প্রটেকটিভ কপার শিল্ডিং দ্বারা আবৃত।
- ব্যান্ডউইথ : ১৬ Mbps তবে ৫০০ Mbps হতে পারে
- ট্রান্সমিশন ডিসটেন্স :১০০ মিটার
টুইস্টেড পেয়ার ক্যাবলের সুবিধাসমূহ−
- ১। টুইস্টেড পেয়ার ক্যাবল দামে খুবই সস্তা এবং ইনস্টল করাও সহজ।
- ২। অ্যানালগ এবং ডিজিটাল উভয় ডেটা ট্রান্সমিশনে এ ক্যাবল ব্যবহৃত হয়।
- ৩। কম দূরত্বে যোগাযোগ করার জন্য এই ক্যাবল অত্যাধিক ব্যবহিত।
টুইস্টেড পেয়ার কেবলের অসুবিধাসমূহ−
- ১। এ ধরনের ক্যাবল ব্যবহার করে ১০০ মিটারের বেশি দূরত্বে কোনো ডেটা প্রেরণ করা কষ্টকর।
- ২। ট্রান্সমিশন লস অনেক বেশি হয়ে থাকে।
টুইস্টেড পেয়ার কেবলের ব্যবহার−
- ১। টেলিফোন লাইনে এই ক্যাবল ব্যবহিত হয়।
- ২। LAN এর ক্ষেত্রে অত্যাধিক ব্যবহিত।
অপটিক্যাল ফাইবারঃ অপটিক্যাল ফাইবার কাঁচ অথবা প্লাস্টিকের তৈরি এক ধরনের ডাই-ইলেকট্রিক (অন্তরক) পদার্থ দ্বারা তৈরি,যা আলো পরিবহনে সক্ষম। অপটিক্যাল ফাইবারের মধ্য দিয়ে আলোর পূর্ণ অভ্যন্তরীণ প্রতিফলনের মাধ্যমে অতি দ্রুত ডেটা প্রেরণ করা যায়। অপটিক্যাল ফাইবারের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো এটি ইলেকট্রিক্যাল সিগন্যালের পরিবর্তে আলোক বা লাইট সিগন্যাল ট্রান্সমিট করে। অপটিক্যাল ফাইবার কাঁচের তন্তু হওয়ায় বিদ্যুৎ চৌম্বক প্রভাব হতে মুক্ত। বর্তমানে যে সব অপটিক্যাল ফাইবার পাওয়া যায় তার ডেটা ট্রান্সমিশন হার ১০০ mbps থেকে ২ gbps।
অপটিক্যাল ফাইবার এর বিভিন্ন অংশ-
- কোর: ভিতরের ডাই-ইলেকট্রিক পদার্থ।
- ক্ল্যাডিং: কোরকে আবদ্ধ করে রাখা বাইরের ডাই-ইলেকট্রিক পদার্থ যা আলোর প্রতিফলন করতে পারে।
- বাফারঃ তন্তুকে বাইরের পরিবেশের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করে।
- জ্যাকেট: এক বা একাধিক তন্তুকে ক্যাবলের মধ্যে ধারণ করে।
অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবলের বৈশিষ্ট্য−
- ১। অত্যধিক উচ্চ গতিতে ডেটা ট্রান্সমিট করতে পারে।
- ২। এটি ইলেক্ট্রিক্যাল সিগনালের পরিবর্তে আলোক বা লাইট সিগন্যাল ট্রান্সমিট করে।
- ৩। অতি স্বচ্ছতা।
- ৪। রাসায়নিক সুস্থিরতা বা নিষ্ক্রিয়তা
- ৫। এতে আলোকের পূর্ণ আভ্যন্তরীণ প্রতিফলন পদ্ধতিতে ডেটা উৎস থেকে গন্তব্যে গমন করে।
- ৬। শক্তির অপচয় রোধ।
- ৭। নেটওয়ার্কের ব্যাকবোন হিসেবে ফাইবার অপটিক ক্যাবল অধিক ব্যবহৃত হয়।
অপটিক্যাল ফাইবার এর সুবিধা-
- ১। আয়তনে ছোট, ওজনে হালকা ও সহজে পরিবহনযোগ্য।
- ২। সহজে প্রক্রিয়াকরণ করা যায়।
- ৩। শক্তির অপচয় কম।
- ৪। বিদ্যুৎ চৌম্বক প্রভাব হতে মুক্ত।
- ৫। ডেটা আদান-প্রদান নির্ভুল।
- ৬। পরিবেশের তাপ-চাপ ইত্যাদি দ্বারা প্রভাবিত হয় না।
- ৭। ডেটা সংরক্ষণের নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা সবচেয়ে বেশি।
- ৮। বর্তমানে অপটিক্যাল ফাইবারের মাধ্যমে আলোকসজ্জা, সেন্সর ও ছবি সম্পাদনের কাজ করা হয়।
অপটিক্যাল ফাইবার এর অসুবিধা-
- ১। ফাইবার অপটিক ক্যাবলকে U আকারে বাঁকানো যায় না।
- ২। অপটিক্যাল ফাইবার অত্যন্ত দামি।
- ৩। অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল ইনস্টল করা অন্যান্য ক্যাবলের চেয়ে তুলনামূলক কঠিন।
পাঠ মূল্যায়ন-
- ক। কো-এক্সিয়াল ক্যাবল কী?
- ক। টুইস্টেড পেয়ার ক্যাবল কী?
- ক। ফাইবার অপটিক ক্যাবল কী?
- খ। “ডেটা ট্রান্সমিশনে আলোকে রশ্মি পরিবাহী তার উত্তম।”-ব্যাখ্যা কর।
- খ। ডেটা চলাচলের জন্য ফাইবার অপটিক ক্যাবল অধিক কার্যকর কেন?
- খ। অপটিক্যাল ফাইবারে দ্রুত গতিতে ডেটা আদান-প্রদানের কারণ ব্যাখ্যা কর।
- খ। “অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবলকে নেটওয়ার্কের ব্যাকবোন বলা হয়”- ব্যাখ্যা কর।
- খ। “আলোর গতিতে ডেটা ট্রান্সমিশন করা সম্ভব”-ব্যাখ্যা কর।
- খ। ফাইবার অপটিক ক্যাবল ই এম আই (EMI) মুক্ত কেন?
- খ। অপটিক্যাল ফাইবারের ব্যান্ডউইথ বুঝিয়ে লেখ।
- খ। আলোর পুর্ণ অভ্যন্তরীণ প্রতিফলন পদ্ধতিতেও ডেটা ডেটা ট্রান্সমিশন সম্ভব-ব্যাখ্যা কর।
- খ। অপটিক্যাল ফাইবার তৈরিতে মাল্টিকম্পোনেন্ট কাঁচ ব্যবহার করা হয় কেন? ব্যাখ্যা কর।
- খ। পূর্ণ অভ্যন্তরীণ প্রতিফলন পদ্ধতিতে ডেটা ট্রান্সমিশন মাধ্যম ব্যাখ্যা কর।
খ। মাধ্যম হিসেবে ফাইবার অপটিক ক্যাবল তড়িৎ চৌম্বক প্রভাবমুক্ত- ব্যাখ্যা কর।
তড়িৎ চৌম্বক প্রভাব থাকলে হলে সেখানে অবশ্যই তড়িতের ব্যবহার থাকতে হবে। যেহেতু অপটিক্যাল ফাইবারের মধ্য দিয়ে আলোক সিগনাল প্রবাহিত হয়। এখানে কোনো তড়িৎ সিগনাল প্রবাহিত হয় না। সুতারং মাধ্যম হিসেবে ফাইবার অপটিক ক্যাবল তড়িৎ চৌম্বক প্রভাবমুক্ত।
খ। ফাইবার অপটিক ক্যাবলে দ্রুত ডেটা প্রবাহিত হয়- ব্যাখ্যা কর।
প্রেরক যন্ত্র অ্যানালগ বা ডিজিটাল সংকেতকে প্রয়োজনীয় মডুলেশনের মাধ্যমে আলোক তরঙ্গে রূপান্তরিত করে ফাইবারে এ প্রেরণ করে। অপটিক্যাল ফাইবার আলোক রশ্মির পূর্ণ আভ্যন্তরীণ প্রতিফলন এর মাধ্যমে ডেটা পরিবহণ করে থাকে। ফলে এখানে কোনো এটিনুয়েশন বা চৌম্বকিয় প্রভাব থাকে না। ফলে এর মধ্যে দিয়ে দ্রুত ডেটা প্রেরণ করা যায়।
উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও-
গ। চিত্রে চিহ্নিত প্রত্যেকটি স্তরের বর্ণনা দাও।
ঘ। টুইস্টেড পেয়ার ক্যাবলের সাথে চিত্রটির ক্যাবলের পার্থক্য বিশ্লেষণ করো।